ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫ , ২৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কটিয়াদী কৃষকের ফসল রক্ষায় অতন্দ্রপ্রহরী কাকতাড়ুয়া


আপডেট সময় : ২০২৫-০১-০৫ ০১:১৪:২৩
কটিয়াদী কৃষকের ফসল রক্ষায় অতন্দ্রপ্রহরী কাকতাড়ুয়া কটিয়াদী কৃষকের ফসল রক্ষায় অতন্দ্রপ্রহরী কাকতাড়ুয়া



এম এ কুদ্দুছ, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় চাষাবাদের ধরন বদলে গেলেও কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার চরাঞ্চলসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থানে কৃষি জমির ফসল রক্ষায় কৃষকরা সনাতন পদ্ধতির কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার করছেন এখনো।

সুত্র মতে, আদিকাল কাল থেকে আবহমান গ্রাম বাংলায় কৃষকরা খেতের ফসল পশু-পাখি, ইঁদুর এমনকি মানুষের কু-নজর হতে রক্ষার কৌশল হিসেবে অদ্ভুত ও অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কার করে তার নাম দেন কাকতাড়ুয়া।যুগ যুগ ধরে এ রকম এক অতন্দ্রপ্রহরীকে ফসলের ক্ষেতে দেখতে পাওয়া যায়। আধুনিক যুগেও গ্রামীণ জনপদে এমন অদ্ভুত বিশ্বাসের লোকের যেন অভাব নেই।

তেমনই বিশ্বাস নিয়ে কৃষকরা ক্ষেতের ফসল রক্ষার্থে মানুষের আকৃতি সদৃশ্য কাকতাড়ুয়া ব্যবহার করছেন সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহকালে উপজেলার আলগীরচর গ্রামের আদর্শ কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, লম্বা দন্ডায়মান একটি খুঁটি এবং দুই বা তিন ফুট ওপরে আড়াআড়ি আরেকটি খুঁটি বেঁধে তাতে ছন বা খড় প্যাঁচিয়ে মোটাসোটা করা হয়। তারপর আড়াআড়ি বাঁধানো অংশের সামান্য ওপরে ছন বা খড়কুটো দিয়ে ডিম্বাকৃতি বা মাথার মতো বস্তু বানানো হয়। এরপর ছেঁড়া জামা বা পাঞ্জাবি পরিয়ে দেওয়া হয় এটিকে। ডিম্বাকৃতির অংশটিকে ঢেকে দেওয়া হয় মাটির হাঁড়ি দিয়ে। সেই হাঁড়িতে চোখ-নাক-মুখ এঁকে দেওয়া হয় চুন বা চক দিয়ে। যা দেখে ভয় পাওয়ার মতো একটা ব্যাপার ঘটে থাকে।

এই কাকতাড়ুয়াকে ফসলি জমির মাঝখানে দন্ডায়মান রাখা হয়। অনেকের বিশ্বাস বাড়ন্ত ফসলের দিকে পথচারীর কুদৃষ্টি থেকে কাকতাড়ুয়া রক্ষা করে। দূর থেকে দেখলে যেন মনে হয় মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। এই কাকতাড়ুয়া দেখে ক্ষেতে পশু-পাখির উপদ্রব ঘটে না। ফলে ফসলও নষ্ট হয় না। চলতি মওসুমে কৃষকের আবাদকৃত পটল,বেগুন, খিরা, মরিচ, আলু, পিঁয়াজ, শসা, টমেটো ইত্যাদি ফসলি জমিতে বেশি ওই কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার করতে দেখা যায়।

উপজেলার চর ঝাকালিয়া গ্রামের কৃষক মো. জহিরুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, কাকতাড়ুয়া পশু-পাখিকে ভয় দেখানোর জন্যে জমিতে দাঁড় করা মানুষের প্রতিকৃতি বিশেষ। যা ক্ষতিকর পাখির আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার উদ্দেশে জমিতে এটা রাখা হয়। এটি এক প্রকার ফাঁদ, যা ভয় দেখানোর উদ্দেশে তৈরি করা হয়। সনাতন ধারায় এটি মানুষের দেহের গঠনের সঙ্গে মিল রেখে পরিত্যক্ত কাপড় দিয়ে সঙের ন্যায় সাজানো হয়। তারপর জমির মাঝামাঝি স্থানে খুঁটি হিসেবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এটি বাতাসে দুলতে থাকায় পাখির উৎপাত ও তাদের খাদ্য সংগ্রহ করা থেকে বিরত রাখার প্রয়াস চালানো হয় মাত্র।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন জানান, ফসল রক্ষায় কাক তাড়ুয়ার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবুও উপজেলার চরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত এলাকার অনেক কৃষি জমিতে এমনি কাকতাড়ুয়া দেখা যায়। অনেকের ধারণা তাদের ক্ষেতে কাক তাড়ুয়া দাঁড়ানো থাকলে ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না, এমন বিশ্বাস থেকেই কৃষকেরা কাক তাড়ুয়া জমিতে স্থাপন করে থাকতে পারেন বলেও মন্তব্য করেন তারা। এম এ কুদ্দুছ, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি



 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ